বাংলা ভাষার জন্য যাঁরা আজীবন লড়াই করেছেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। অথচ তাঁর জন্মভূমি সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নেই তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কোনো স্থাপনা, এমনকি একটি শহিদ মিনারও নয়। ‘ভাষা মতিন’ নামে পরিচিত এই মহান নেতা একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের ধুবুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কেটেছে ভারতের দার্জিলিংয়ে, কিন্তু রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েই জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে যখন পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে, তখন মতিন ও তাঁর সহযোদ্ধারা এর বিরোধিতা করে রাজপথে নামেন। তাঁর সংগ্রামের ফলে তিনি ‘ভাষা মতিন’ নামে খ্যাত হন।
তাঁর নিজ গ্রামের মানুষ জানে, তাঁদের ভূমিতেই জন্মেছিলেন এক মহান ভাষা সংগ্রামী। কিন্তু ভাষা মতিনের স্মরণে নেই কোনো স্মৃতিফলক, শহিদ মিনার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলাগাছ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহিদ মিনারে প্রতিবছর শ্রদ্ধা জানানো হয়, যা এই মহান নেতার প্রতি নিদারুণ অবহেলারই পরিচয় দেয়।
ভাষা মতিনের স্মরণে একটি বেসরকারি সংস্থা একটি পাঠাগার নির্মাণ করেছিল। তবে সেটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার একমাত্র অবলম্বনটুকুও হারিয়ে গেছে। এলাকাবাসীরা জানান, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁকে চিনবেই না।
ভাষা মতিনের ভাই গোলাম আজম নান্নু বলেন, “এই ভাষা সংগ্রামীর নামে একটি স্কুল বা কলেজ হলে তাঁর নাম অম্লান থাকবে এবং স্থানীয় শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।” উমারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মণ্ডলও একটি স্থায়ী স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, “আমরা পাঠাগারটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেব এবং ভাষা সৈনিকদের স্মৃতি রক্ষায় ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশা রাখছি।” তবে এখন পর্যন্ত ভাষা মতিনের স্মৃতি সংরক্ষণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের এক অগ্রনায়ক হয়েও ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন তাঁর নিজ জন্মভূমিতে একরকম উপেক্ষিতই থেকে গেছেন। যেখানে সারা দেশে ভাষা শহিদদের স্মরণে নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সেখানে ভাষা মতিনের নিজ গ্রামে তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এখন অন্তবর্তীকালীন সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের এগিয়ে এসে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে এই মহান ব্যাকিত্বের ইতিহাস।